
পর্যটন জেলা কক্সবাজারে মেগাপ্রকল্পসহ ৯৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে জাতীয় অর্থনীতির বড় একটি অংশ অর্জিত হবে এ জেলা থেকেই। কর্মসংস্থান হবে লাখো মানুষের। পাল্টে যাবে দেশের চেহারা। এই আমূল পরিবর্তনের অংশীদার কক্সবাজারের মানুষও ভাগ্যবদলের স্বপ্ন বুনছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি উন্নত ও পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ, মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণ করা হচ্ছে।
শুধু কক্সবাজারই নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বৈশ্বিকভাবেও গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের। এরই মধ্যে জাতিসংঘ গত ২৪ নভেম্বর স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদন করে।
জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি উদযাপনে “উন্নয়নের নতুন জোয়ার, বদলে যাওয়া কক্সবাজার” শিরোনামে (৩১ মার্চ) সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দিনব্যাপি নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। দিনব্যাপি এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
# প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
# থাকছে কনসার্টসহ নানা আয়োজন, আকাশ রাঙাবে আতশবাজিতে
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি ড. আহমদ কায়কাউস এর সঞ্চালনায় এদিন স্থানীয় উন্নয়নের উপর বক্তব্য প্রদান করবেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য রাখবেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আটজন সচিব, বিভাগ ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ এতে উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাÐসমূহ যেমন- মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত রেলওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প, কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা, আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং স্থানীয় নৃ-তাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি-সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে।
এরই প্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় এই উৎসবের সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, “জাতিসংঘ কর্তৃক ‘স্বপ্লোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ২ জানুয়ারি রাজধানীতে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর সবপ্রথম কক্সবাজার জেলায় এই উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে অনেকগুলো মেগাপ্রকল্পসহ ৯৮টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেসকল উন্নয়নের বার্তা তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। এ জন্য সকল শ্রেণীর মানুষকে এর সাথে সম্পৃক্ত করেছি। এই আয়োজন কক্সবাজারবাসীর জন্য।”
সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন আরও বলেন, “দিনব্যাপি এই উৎসবে ২০টি স্টল বসানো থাকছে। সেখানে চলমান প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সৈকতে বালি দিয়ে মেগা প্রকল্পগুলোর ভাস্কর্য তৈরী করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগত পর্যটকরাও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পর্কে জানতে পারবে।”
সংবাদ সম্মেলনে সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেলসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
দিনব্যাপি যত আয়োজন :
সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন জানান এই উৎসবকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্ব অনুষ্ঠান সকাল ১০টায় শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে চলবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, স্বাগত বক্তব্য, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বিষয়ে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন।
সকাল সাড়ে ১০টায় কবিতা আবৃতি করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা। এরপর স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় দেশাত্ববোধক গান ও পল্লী সঙ্গীত, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে স্কুল শিক্ষার্থীদের সংলাপ, স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পরে স্কুল পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। বেলা পৌনে ১টায় স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। অতিথিদের আগমনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এরপর রয়েছে স্থানীয় শিশু শিল্পীদের অংশগ্রহণে সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা।
সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের স্বাগত বক্তব্যের পর ‘জোরশে চলো বাংলাদেশ’ বাংলাদেশ শীর্ষক প্রামান্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে স্থানীয় উন্নয়নের উপর উপস্থাপনা। এতে বক্তব্য রাখবেন, ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব ডা. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় উন্নয়নের সুবিধাভোগীদের বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানের সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল বক্তব্য রাখবেন। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে ‘ও জোনাকি’ গানের ভিডিওচিত্র চিত্রায়ন করা হবে। এরপর ৭টা ২০ মিনিটে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’ গানের সাথে দলীয় নৃত্য ও সৈকতের আকাশ রাঙানো হবে হরেক রঙের আতশবাজিতে। সবশেষে মঞ্চ মাতাবেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ফুয়াদ এন্ড ফ্রেন্ডস ও চিরকুট।
যেসব প্রকল্প ভাগ্য বদলাবে:
দোহাজারি-কক্সবাজার রেল প্রকল্প একসময় ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলেছে দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ। যা এ বছরের ডিসেম্বরেই শেষ করার কথা রয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণ অনেকটা বাস্তবায়িত হচ্ছে। করা হচ্ছে সাগর ছোঁয়া রানওয়ে, ঝিনুকের আদলে টার্মিনাল। একই সঙ্গে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের করা হচ্ছে ১৩৯টি আশ্রয়ণ প্রকল্প। ইতিমধ্যে নির্মিত ২০টি ভবনের ঠাঁই হয়েছে ৬শ উদ্বাস্তু পরিবারের।
মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এই প্রকল্পটিও শেষ হওয়ার পথে। এর সঙ্গে মাতারবাড়িতে দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। ইতিমধ্যে নির্মিত জেটি ভিড়েছে বিদেশি ৭০টির বেশি জাহাজ।
এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আজিজ বলেন, ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এটা দেশের আত্মমর্যাদা বাড়াবে। এই সুসংবাদ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সর্বপ্রথম কক্সবাজারকে আমরা বেছে নিয়েছি। কারণ, কক্সবাজারে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। পাশাপাশি সকলের প্রচেষ্টায় দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারবো।”
এ ব্যাপরে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, “কক্সবাজারে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। করোনাকালীন সময়েও সেগুলোর কাজে বাধা আসেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে কক্সবাজার জেলা দেশে বিশেষ ভুমিকা রাখছে, আগামীতে আরো বেশি ভুমিকা রাখবে। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে উৎসব হচ্ছে এটা পরম সৌভাগ্য। জেলাবাসীর মধ্যে ব্য্যাাপক সাড়া পড়েছে।”
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উল্লেখ করেন, “এই আয়োজনটি অর্জনেরই একটি বিশেষ স্বীকৃতি। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হবে। একই সঙ্গে উক্ত অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক জাতীয় অর্জন সম্পর্কে জনমনে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা মূল লক্ষ্য। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত